স্টাফ রির্পোটারঃ আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাবে জাতি। এ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সরকারি ছুটির দিন।
‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’
আজ থেকে ৫২ বছর আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে গ্রেপ্তারের আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ এ কে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে লিখেছেন, যখন প্রথম গুলিটি বর্ষিত হলো, ঠিক সেই মুহূর্তে পাকিস্তান রেডিওর সরকারি তরঙ্গের কাছাকাছি একটি তরঙ্গ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর ভেসে এলো। ওই কণ্ঠের বাণী মনে হলো আগেই রেকর্ড করে রাখা হয়েছিল। তাতে শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে ঘোষণা করলেন।’ দীর্ঘ নয় মাস রক্তাক্ত সংগ্রামের পর ষোলই ডিসেম্বর বাঙালির বিজয় অর্জিত হয়।
এদিকে দারিদ্র্যের তলাবিহীন ঝুড়ি, বারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন পিতৃহন্তারক জাতি হারতে হারতেও জেগে উঠেছে ফিনিক্স পাখির মতো।
জাতির পিতার স্বপ্ন ও আদর্শ পুঁজি করেই তার উত্তরসূরির নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের লড়াই। ইতোমধ্যেই প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পথ-নকশা তৈরি করেছে ৫২-তে পা রাখা উন্নয়নশীল বিশ্বের ‘রোলমডেল’ বাংলাদেশ। করোনা ভাইরাস এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার পাশ কাটিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঠিক রাখা, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রো রেল তৈরি, বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পর ডেল্টা প্ল্যানসহ জাতিকে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশের। রূপকল্প ২০৪১ সালে উন্নত দেশের স্বপ্নে বিভোর জাতি। এক দশকে দারিদ্র্য কমেছে ১৫ শতাংশের বেশি। মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১৪ দশমিক ৭৫ গুণ আর জিডিপি বেড়েছে ৩০ গুণ। ১৯৭০ সালে এই অঞ্চলের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ১৪০ ডলার, বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে। ১৯৭২-১৯৭৩ সালের তুলনায় বাজেটের আকার বেড়েছে প্রায় ৭২২ গুণ। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ঘরে ঘরে বিজলি বাতির চমক, শিল্পায়ন, গৃহায়ণ, নগরায়ণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, দারিদ্র্য বিমোচন, দুর্যোগ প্রশমনে বদলে গেছে বাংলাদেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণ- যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার লড়াই সংগ্রামের সুবিশাল ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, পোশাক শিল্প, ওষুধ শিল্প, রপ্তানি আয় বাড়াসহ অর্থনৈতিক সূচকে অগ্রগতি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরসহ দেশের মেগা প্রকল্পে অগ্রগতিতে বদলে গেছে বাংলাদেশের চেহারা।
কর্মসূচি : মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। এদিন ঢাকাসহ সারাদেশে প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এ উপলক্ষে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সব সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র, নিবন্ধ ও সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ করবে। এ উপলক্ষে ইলেকট্রনিক মিডিয়া মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি : মহান স্বাধীনতা উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে, সূর্যোদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে দলের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন। সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনপ্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। এছাড়া মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
২৫ মার্চ রাত ১২টা ১ মিনিটে মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান স¤প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ স¤প্রদায় এবং সকাল ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু স¤প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে। এদিকে বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধিদল টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিল কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। পরদিন সোমবার বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দলের আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।