স্টাফ রিপোর্টারঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সোনারগাঁ একসময় প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল। এই ভূমি বঙ্গবন্ধুর প্রিয় ভূমি। এটাকে ইট পাথরে বন্দি করবেন না। সংস্কৃতির আসল রূপ ধরে রাখতে হবে। বিল্ডিং করে কোনো লাভ নেই। বাঁশ দিয়ে আপনারা যে সেতু তৈরি করেছেন সেটাই এখানকার ঐতিহ্য। এটাকে বহাল রাখতে হবে। এটার আদি রূপটাকে সঠিক জায়গায় রাখতে হবে। এখানে এসে ইট পাথর বড় বড় বিল্ডিং দেখবো সেটা ঠিক নয়। এখানে কাঁচা রাস্তাই মানায়।
আমার মতে সোনারগাঁ জাদুঘরকে স্মার্ট জাদুঘর করা দরকার নেই। এর সঙ্গে নানা ইতিহাস ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। পানাম সিটির মনোরম দৃশ্যপট সবাইকে মুগ্ধ করে। সোনারগাঁয়ের এইসব বিষয়গুলোর দিকে কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো নজর দিলে জাতির পিতা শেখ মজিবুর রহমান ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের লক্ষ্য সার্থক হবে। আজকের সমাবেশ সাংস্কৃতিক সমাবেশ। আপনারা সব জায়গায় রাজনীতি টেনে আনবেন না। এই সোনারগাঁ সংস্কৃতির আমানত। আমাদের এইসব সম্পদকে রক্ষা করতে হবে।
বুধবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে একথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, আজকের এ অনুষ্ঠানে শ্লোগান পাল্টা শ্লোগান কী আদৌ প্রয়োজন? আমাকে যার যার শক্তি দেখানোর চেষ্টা। আমি রাস্তায় বের হলে শ্লোগান দিতে পারেন। তবে এখানে সে ধরনের শ্লোগান মোটেও মানায় না। শ্লোগানপাল্টা শ্লোগান মোটেও আমার ভালো লাগেনি। আমি বিরক্ত হয়েছি। এটা আমাদের সংস্কৃতির আমানত। এটা আপনারা বজায় রাখবেন। এটা আমার অনুরোধ।
জাতীয় পার্টি মনোনীত নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকার প্রশংসা করে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। ধন্যবাদ জ্ঞপন করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ আমাদের সহযোগী রাজনৈতিক দলের একজন সংসদ সদস্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা সকলকে জানাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে চলমান আমার মন্ত্রনালয়ের অধিনাস্থ কাজ গুলো প্রকাশ্যে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন। এজন্য আমি ওনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, দেশে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের দেশ আবারও সাম্প্রদায়িকতার ছোবলে আক্রান্ত। একটি মহল জঙ্গিবাদের দ্বারা এদেশে বিশৃঙ্খলার সূচনা করেছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় হিংস্র থাবা এদেশে দৃশ্যমান হচ্ছে। এখানে রাজনীতির পাশাপাশি সংস্কৃতির একটি দায়িত্ব আছে। এসব জঙ্গিবাদ সংস্কৃতির চিরায়ত শত্রæ। এরা আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি। এদের হৃদয়ে বাংলাদেশ নেই। এইসব অপশক্তিকে যেকোনো মূল্যে রুখতে হবে। শেখ হাসিনাই আমাদের আসল ঠিকানা। আজ সময় এসেছে তার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। অপশক্তি দূর করতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
বিএনপির রাজনীতি প্রসংঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন দেখে তাদের অন্তরজ্বালা সৃষ্টি হয়েছে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী একদিনে ১০০ ব্রিজ উদ্বোধন করেন। পরশুদিন নরসিংদীর ব্রিজের উদ্বোধনী ফলক পুড়িয়ে দিয়েছে একটি মহল। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে আগ্রহী নয়। তাদের মধ্যে শুধু খাই খাই ভাব। তারা ভোটে হেরে যাবে তাই এমন করছে।
অসুস্থ রাজনীতি করতে করতে মির্জা ফখরুলরা আজ অসুস্থ হয়ে গেছে। আমরা দেশে কোনো অশান্তি চাই না। প্রতিদিনই আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। যারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা করবে তার সমুচিত জবাব দিতে হবে। এখানে কোনো আপোস নেই। আমরা কোনো উস্কানি দিবো না। এইসব উস্কানি বন্ধ করতে আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে। তারা এইসব কর্মকাÐ করবে আমরা চুপ করে কি ললিপপ খাবো? তার সমুচিত জবাব আমরা দিবো।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে এ জাদুঘরের উদ্বোধনে এসেছিলাম। এখানকার বিখ্যাত জামদানি। এদের আরও উৎসাহ দেওয়া দরকার। আন্তর্জাতিকভাবে এ শিল্প ও এখানকার পণ্য-সামগ্রী তুলে ধরতে হবে। এখানকার পণ্য আমাদের জন্য লাভজনক। এ বিষয়গুলো নজর দিলে আমাদের এখানে বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নে উজ্জীবিত হয়ে এ ফাউন্ডেশনের যাত্রা সূচনা করেছিলেন সেটা স্বার্থক হবে।
সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক এসএম রেজাউল করিম, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী মোহাম্মদ আবুল হাশেম খান, নেত্রকোনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব মো. আবুল মনসুর, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, সোনারগাঁ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ্-আল-কায়সার, প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের আয়োজনে মাসব্যাপী লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব চলবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
দেশীয় সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনে এবারের উৎসব ও মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কারুশিল্পীদের প্রদর্শনী, লোক জীবন প্রদর্শনী, পুতুল নাচ, বায়স্কোপ, নাগর দোলা, গ্রামীন খেলা প্রদর্শন করা হবে।
এ বছর কর্মরত কারুশিল্পীদের প্রদর্শনীর ৩২টি স্টল সহ ১০০টি স্টল রয়েছে। এছাড়া মুন্সিগঞ্জ ও মৌলভী বাজারের শীতল পাটি, মাগুরা ও ঝিনাইদহের শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি ও মুখোশ। চট্টগ্রামের তালপাতার হাতপাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের জামদানী, বগুড়ার লোকজ খেলনা, প্রতিদিন সন্ধ্যায় লোকজ মঞ্চে পালাগান, বাউল গান, জারিসারি গান, হাছন রাজার গান, গ্রামীন খেলা হা-ডু-ডু, কানামাছি খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
মেলা উপলক্ষে পুরো ফাউন্ডেশন চত্বরকে সাজানো হয়েছে বর্নিল সাজে। দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য ফাউন্ডেশনের নাগরদোলা ও লেকে নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।