স্টাফ রির্পোটার: নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের দীর্ঘ দুই মাস পর হাসেম ফুডের সেই কারখানা (সেজান জুস কারখানা) থেকে মিলেছে মানুষের পোড়া হাড়।
গতকাল মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) পৃথক চারটি স্থানে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি। এসব হাড়-কঙ্কালের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুডস লিমিটেড কারখানার ছয়তলার একটি ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। সরকারি হিসেবে, এতে প্রাণ হারান কারখানার ৫১ জন শ্রমিক-কর্মচারী। যদিও এই ঘটনায় গঠিত নাগরিক তদন্ত কমিটির দাবি, ৫৪ জনের প্রাণ গেছে এই ঘটনায়।
ঘটনার পরদিন রাতে এই ঘটনায় রূপগঞ্জের ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। রূপগঞ্জ থানা দায়ের করা ওই মামলার এজাহারনামী আসামি সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম, তার চার ছেলে ও তিন কর্মকর্তাকে গ্রেফতারও করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি নারায়ণগঞ্জের পরিদর্শক আতাউর রহমান বলেন, আগুনে পুড়ে যাওয়া ৪৮ মৃতদেহ ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। স্বজনদের সংগৃহীত নমুনার সাথে পরীক্ষা করে ৪৫ মরদেহের পরিচয় নিশ্চিত করা গিয়েছিল। সেসব হস্তান্তরও করা হয়েছে।
এদিকে নতুন করে তিনজন নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনরা আবেদন করেছেন। তারা দাবি করেছেন, আরও তিনজন ওই কারখানায় ঘটনার দিন কর্মরত ছিলেন। ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে নতুন করে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রথম দিনের উদ্ধার কার্যক্রমে ভবনের চতুর্থ তলার পৃথক চারটি স্থান থেকে মানুষের পোড়া হাড় পাওয়া গেছে বলে জানান পরিদর্শক আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ভবনের চতুর্থ তলা থেকেই ৪৮ মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। নতুন করে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করার পর চতুর্থ তলা থেকেই এসব হাড় পাওয়া গেছে। হাড়গুলো ঢাকায় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
অগ্নিকান্ডের ঘটনার ৯ দিন পর গত ১৭ জুলাই নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত তদন্ত দল হাসেম ফুড কারখানা পরিদর্শনে এসে পুড়ে যাওয়া কারখানা ভবনটিতে অর্ধগলিত হাড় দেখতে পান বলে জানান। ভবনটির চতুর্থ তলায় হাড়গুলো দেখতে পান বলে জানান তারা। হাড়গুলো কোন নারী শ্রমিকের বলেও ধারণা ছিল তাদের।
তবে এই বিষয়টি তখন পাত্তা দেয়নি ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন। ওইদিনই নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম বলেছিলেন, তিনি ওই তদন্ত দলের সাথেই ছিলেন। তবে এমন কিছু তিনি দেখতে পাননি। হাড়ের খবর পাওয়ার পর সেখানে তিনি পুনরায় গিয়েছেন এবং কিছুই পাননি বলে দাবি করেন।
তবে নাগরিক তদন্ত কমিটির সদস্য ও গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেছিলেন, চতুর্থ তলায় দক্ষিণ-পূর্ব পাশে একটি পাজামা সদৃশ বস্তু দিয়ে মোড়ানো হাড় দেখতে পেয়েছেন। ধারনা করা হচ্ছে এটা কোন নারী শ্রমিকের কোমড়ের অংশ। ভবনটির এই কক্ষটি দুর্গন্ধে ভরা ছিল। এই দুর্গন্ধ রানা প্লাজা ও তাজরিনের ঘটনার পরও তারা পেয়েছিলেন।