আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব বাতিল ও পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত এক বাক্যে রায় দিয়েছেন, গত ৩ এপ্রিলের অনাস্থা ভোট নসাৎ করার জন্য সরকারের চক্রান্ত ও এর পরবর্তী সব সিদ্ধান্ত ছিল অসাংবিধানিক। দেশটির সর্বোচ্চ আদালত থেকে এর বেশি আশাও করা যায় না।

এ ঘোষণার মাধ্যমে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালত দেশটিতে গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনলো। একই সঙ্গে, আদালত নিজেকে পাকিস্তানের সংবিধানের রক্ষক হিসেবে পুনরায় জাহির করলো। এই রায়ের ফলে এখন আশা করা যায় যে, পরবর্তীতে পাকিস্তানে এ ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

পাকিস্তানের এই রাজনৈতিক সংকট এত তাড়াতাড়িও আসতো না। বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে অংশ নিতে না দেওয়ার জন্য ইমরান খানের যে একগুঁয়ে জেদ, তা পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে একটি প্রহসনে পরিণত করেছে। এটি মনে রাখা দরকার ছিল যে, এটি শুধুই একটি বিকল্প ছিল, বাধ্যতামূলক কোনো বিষয় নয়।

ইমরানের কাছে রাজনৈতিক বিকল্প ছিল। তিনি রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনে নিয়ে পরবর্তী নির্বাচনে নিজের শক্তি-সামর্থ্য প্রয়োগ করতে পারতেন। অথচ প্রধানমন্ত্রী তার অবাধ্যতার মাধ্যমে দেশকে দেখিয়ে দিলেন, তিনি নিজের পথ প্রশস্ত করতে প্রয়োজনে সাংবিধানিক সংকটের দিকে দেশকে ঠেলে দিতে পারেন।

পাকিস্তান সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী একটি সরল সংসদীয় পদ্ধতি বাতিল করতে চেয়েছিল ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। পিটিআইয়ের এমন বেপরোয়া সিদ্ধান্ত ইতিহাসে একটি লজ্জাজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। প্রকৃতপক্ষে, এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সহানুভূতিহীন দৃষ্টিভঙ্গির পরে পিটিআইকে অবশ্যই এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে যে, দলটি একটি সংকীর্ণ রাজনৈতিক লক্ষ্যের জন্য ইচ্ছাকৃত রুক্ষ পথে হাঁটতে গিয়ে সংবিধানের প্রতি যথেষ্ট অনুগত ছিল কি না।

আরও পড়ুন >   বুয়েট সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র‍্যাগিং বন্ধে তদন্ত কমিশন গঠন

পাকিস্তানের এই বিশৃঙ্খলা দেশটির অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে। অনিশ্চয়তার মধ্যে ডলার-রুপির বিনিময় হার কমে গেছে। একই সময় দেশটির বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়েও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বিদেশি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক গোলযোগ তৈরির জেদের কারণে পাকিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্কও বেশ খারাপ হয়েছে। অথচ ইমরান খান এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু এখন পর্যন্ত দেশবাসীর কাছে বলতে পারেননি।

তবে এটি প্রশংসনীয় যে, সুপ্রিম কোর্ট তার নিজস্ব পথেই হেঁটেছে। যদিও এক্ষেত্রে আদালত সংবিধানবহির্ভূত ক্ষমতা অর্জনের অতীতের যে নজির, সেদিকে ধাবিত হতে পারতো। এ বিষয়ে বিচার বিভাগের অসাংবিধানিক ও সংবিধানবহির্ভূত সিদ্ধান্তের অনুমোদন কিংবা আপাত অনুমোদন একটি দ্ব্যর্থহীন রায়ের আশাকে অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছিল। কিন্তু এবার পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত এই বেঞ্চ ভবিষ্যতের জন্য নতুন আশা দেখিয়েছে।

জাতীয় পরিষদকে পুনরায় কার্যকর করার মাধ্যমে আদালত পাকিস্তানের ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষমতা নিম্নকক্ষের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আদালতে এই পরাজয়ের পরে পিটিআইয়ের এখন নিয়ম মেনে খেলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কিন্তু দলটি যদি বুঝতে পারে যে, তার জন্য সম্মানজনকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের আর সুযোগ নেই, তবে কেবল নিজেকে দায়ী করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

আরও দেখুন

সম্পৃক্ত

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button