স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার কালাপাহাড়িয়ায় ইউনিয়নে বুধবার দিবাগত রাতে এক মঞ্চনাটকের মাইকে অতিথির নাম ঘোষণা নিয়ে দন্ধের একপর্যায়ে বুকে ঘুষি মেরে হারিছ মিয়া (৪৫) নামের এক কৃষককে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার (৯ নভেম্বর) মধ্যরাতে উপজেলার মেঘনাবেষ্টিত কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের খালিয়াচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হারিস সরকার ওই এলাকার আলমাছ সরকারের ছেলে। তবে এক পক্ষ দাবী করেছেন ধস্তাধস্তির কোন ঘটনাটি ঘটেনি। হারেস হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার খালিয়ার চর পশ্চিমপাড়া সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপনের বাড়ির পাশের এলাকার অহিদের বাড়িতে বুধবার রাতে যাত্রাপালার আয়োজন করে স্থানীয় মনির হোসেন, আহসানউল্লাহ, ইউসুফ ও তার সহযোগিরা। যাত্রাপালার মাঝে বক্তব্য দেওয়ার সময় মনির পক্ষের লোকজন সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম স্বপনের নাম উচ্চারন করেন। কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান ফাইজুল হক ডালিমের নাম উচ্চারণ করেননি। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কর্মী মনিরের পক্ষের লোকজনের সাথে ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য খোকন সরকারের লোকজনের মধ্যে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটনা ঘটে। ধস্তাধস্তির সময় ধাক্কা ধাক্কির শিকার হন খোকন সরকারের ভাতিজা হারিস সরকার। পরে বাড়ি যাওয়ার পথে অজ্ঞান হয়ে সড়কে পড়ে যান হারিস সরকার। সেখান থেকে তাকে মেঘনা নদী দিয়ে ট্রলারে কুমিল্লার মেঘনা থানার একটি হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে সাবেক চেয়ারম্যান স্বপন বলেন, কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এরই মধ্যে ৩২টি ‘মঞ্চনাটক’ সম্পূর্ণ হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমার বাড়ির পাশে অহিদসহ এলাকার আরও কয়েকজনে মিলে নাটকের আয়োজন করেন। মঞ্চের কাছাকাছি চেয়ারে বসা নিয়ে হারিছের সঙ্গে অনেকের বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। পরে হারিজ তার বাড়ি খালিয়ারচর ফিরার পথে রাস্তায় স্টোকজনিত কারণে মারা যায়। হারিজকে নিজের চাচাতো ভাই বলে দাবী করে তিনি আরও বলেন, কেউ তাকে ঘুষি মেরে হত্যা করেনি। তবে যদি করে থাকে সেটি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অবশ্যই প্রকাশ পাবে। তাকে হত্যার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
তবে ইউপি চেয়ারম্যান ফাইজুল ইসলাম ডালিম বলেন, খালিয়ারচর এলাকাটিতে অধীকাংশই ধর্মভিরু লোকজনের বসবাস। অন্যান্য এলাকায় ধারাবাহিকভাবে ‘মঞ্চনাটক’ হলেও উক্ত এলাকায় নাটকের আয়োজনে স্থানীয়দের বাঁধা ছিল। আগে থেকেই সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এর ফলে আড়াইহাজার থানার পুলিশ সংশ্লিষ্টদের নাটকের আয়োজন থেকে বিরত থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু তাতে তারা কর্ণপাত করেনি। ব্যাপকভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় আমি সিরাজগঞ্জে ছিলাম। আমি শুনেছি অনুষ্ঠানস্থলে হারিজের সঙ্গে অন্যদের বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে ঘুষি মেরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার সময়কার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে বলে তিনি বাদী করেছেন। তিনি বলেন, হারিজের যদি স্টোকজনিত কারণে মৃত্যু হয়ে থাকে; তাহলে সেটি ময়নাতদন্তের রিপোর্টেই প্রকাশ পাবে।
৯নং ওয়ার্ড সদস্য সাইদুর রহমান খোকন বলেন, হারিজের বুকে ঘুষি দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি বুকে চেপে ধরে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। তাকে রাতেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি আরও বলেন, নাটক আয়োজনে পুলিশ ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বাঁধা ছিল। তারা বাঁধা অমান্য করে আয়োজন করে। এর আগেও একই এলাকায় নাটকের আয়োজনে মারামারি ঘটনা ঘটেছিল।
অপরদিকে স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ডালিমগ্রুপ ও স্বপনগ্রুপের লোকজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী স্বপনের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিলেন।
তবে মনিরের পক্ষের লোক আহসানউল্লাহ জানান, স্থানীয় যুবকরা মিলে বুধবার রাতে একটি মঞ্চ নাটকের আয়োজন করে। সেখানে কোন ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেনি। হারিস সরকার আগে থেকেই অসুস্থ ছিলো। নাটক দেখে বাড়ির কাছাকাছি যাওয়ার সময় সড়কে হাট এ্যাটাকে তিনি মারা যান। কিন্তু প্রতিহিংসার বশবতি হয়ে খোকন মেম্বার এ ঘটনাটিকে অন্যদিকে মোড় নেয়ার অপচেষ্টা করছেন বলে তিনি দাবী করেন।
আড়াইহাজার থানার ওসি আজিজুল হক হাওলাদার জানান, খালিয়াচরে মঞ্চ নাটকে নাম বলা না বলা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধস্ত্ধাস্তির ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্যে এক পক্ষের লোক হারিস সরকার। সে বাড়ি যাওয়ার পথে সড়কে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল থেকে কুমিল্লা মর্গে ময়নাতদন্তের পর নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হারিস সরকার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে নাকি হত্যা করা হয়েছে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে তা পরিস্কার জানা যাবে। ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এখনও কোন অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।