ইবনে সিনা সাকিব: গণভবনের ভেতরে অন্ধকার। প্রায় ১৫০ কর্মী গণভবনের ভেতরের পুকুর পরিষ্কার করা ছেড়ে এক জনকে ঘিরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। কথা বলার ফাঁকে এদের মধ্যে এক জন বলে উঠলেন, ‘মা, বিশ্বাস হচ্ছে না, আপনার সঙ্গে কথা বলছি।’ উত্তর যিনি দিলেন তিনি বললেন, বিশ্বাস না হওয়ার কী আছে! আমি শেখ হাসিনা।
তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত যারা তাদের বেষ্টনী ভেঙে মাঝে মাঝেই তিনি চলে আসেন মানুষের সঙ্গে কথা বলার জন্য। নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বলেন, আমি সাধারণ মানুষের নেত্রী। আমাকে দূরের মানুষ করো না।’
মানুষের জন্যই প্রতিদিনের প্রতিটি ক্ষণকে কাজে লাগানোর পণ তার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যেন জাতির পিতার স্বপ্নকে সফল করার প্রত্যয়েই এগিয়ে চলেছেন। তাই দেশের সাধারণ মানুষ ভালোবেসে তাকে ডাকেন ‘শেখের বেটি’। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আজ মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর)। ১৯৪৭ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বেড়ে ওঠেন রাজনৈতিক সংস্পর্শে। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম হওয়ায় রাজনীতির বাইরে যেতে পারেননি শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের পরে ছয় বছর প্রবাস জীবন কাটে বঙ্গবন্ধুকন্যার।
বাবার হাতে গড়া আওয়ামী লীগের রাজনীতি দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব শেখ হাসিনার কাঁধে এসে পড়ে ১৯৮১ সালে। সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশে ফেরেন ওই বছরের ১৭ মে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ শুরু করেন। অমসৃণ ও কণ্টকাকীর্ণ ওই পথ পাড়ি দিতে ৭৫ বছর বয়সী শেখ হাসিনাকে ১৯ বার মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়তে হয়। ১৯ দফায় সন্ত্রাসী হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাঙালিয়ানার ধারক। সহজ নিরাভরণ জীবন যাপন করেন তিনি। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। দেশের প্রতিটি খাত নিয়ে তার একটা পরিকল্পনা রয়েছে। সেই পরিকল্পনা মতো তিনি এগিয়ে চলেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় তিনি অত্যন্ত মানবিক ও আন্তরিক। রাষ্ট্র পরিচালনার মতো ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও তিনি প্রতিটি অগ্রগতির বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ততার মধ্যেও শেখ হাসিনা সাহিত্য চর্চা ও সৃজনশীল লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। প্রতি বছর বইমেলায় তার রচিত গ্রন্থ প্রায় নিয়মিতভাবেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
গণভবন সূত্রে জানা যায়, গভীর রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে দিন শুরু হয় তার। এরপরে কোরআন তেলাওয়াত করেন। ফজরের নামাজ শেষ করে চা-নাস্তা খাওয়ার পাশাপাশি সংবাদপত্র পড়েন। কখনো প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। সাম্প্রদায়িকতা উদার প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক বিজ্ঞানমনস্ক জীবনদৃষ্টি তাকে করে তুলেছে এক আধুনিক, অগ্রসর রাষ্ট্রনায়কে। একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রায় তিনি দিন বদল ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কান্ডারি। এই অভিযাত্রায় তিনি বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং ভরসাস্থল। অথচ ব্যক্তি শেখ হাসিনা যেন খুব সাধারণ একজন মানুষ। সেই সঙ্গে তার সেই সাধারণ মানুষ হওয়াই যেন আমাদের কাছে তিনি আরো বেশি সম্মানের, শ্রদ্ধার মানুষ হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশের আনাচেকানাচে থাকা নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। তাদের কথা দরদ নিয়ে শোনেন। অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী তিনি। কিছু্ ভোলেন না। আর কোনো সময় নষ্ট করেন না।
রাষ্ট্র পরিচালনার সীমাহীন ব্যস্ততার মধ্যেও প্রচুর বই পড়েন প্রধানমন্ত্রী। ভালোবাসেন কবিতা পড়তে। সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে সেলিনা হোসেন, হরিশংকর জলদাস, আনিসুল হকের লেখা পড়েন। গান শোনেন। রবীন্দ্রসংগীত তার পছন্দ। পছন্দের গান ‘ধন ধান্যে পুষ্পেভরা’।
বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতী নদী তীরবর্তী প্রত্যন্ত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম হাসু। দাদা শেখ লুত্ফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলেপিঠে মধুমতী নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায়। তারা পাঁচ ভাইবোন। অপর চার জন হচ্ছেন :শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল। ভাইবোনদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া সবাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের হাতে নিহত হন। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষই যেন তার বৃহৎ পরিবারের পরিণত হয়েছে।