আড়াইহাজার প্রতিনিধিঃ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এবার নারায়ণগঞ্জ-২, আসন আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৬ নেতা।
এরা হলেন, সংসদ সদস্য ও আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু, ব্রুনাই সাবেক রাষ্ট্রদূত বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজালাল মিয়া, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ড. হাবিবুর রহমান মোল্লা, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক তথ্য বিষয়ক সম্পাদক এড. ইকবাল পারভেজ ও উপজেলা চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার।
আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আড়াইহাজারে চলছে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা। তবে এবার দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। দলীয় সূত্রমতে, নজরুল ইসলাম বাবু পরপর তিনবারের সংসদ সদস্য। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলে ৪র্থবারের মতো এমপি পদে লড়েবন তিনি। এছাড়া মমতাজ হোসেন, হেলো সরকার, ইকবাল পারভেজ এরআগেও দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এবারও তারা হাল ছাড়তে নারাজ। খালি মাঠে দলীয় মনোনয়ন যুদ্ধে নজরুল ইসলাম বাবুকে ছেড়ে দিবেন না তারা। ফলে নজরুল ইসলাম বাবু ছাড়াও বাকী ৫জন নানাভাবে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের কাছে লবিং চলাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে আনতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কে হচ্ছেন নৌকার প্রার্থী তা জানতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে আড়াইহাজরের আওয়ামলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের। তবে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, দলের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত। দলের হাইকমান্ড যাকে মনোনয়ন দিবে আমরা তার পক্ষে তথা নৌকাকে বিজয়ী করতে সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করবো। আশা করি নির্বাচনে সবাই সকল প্রকার মত প্রার্থক্য ভুলে গিয়ে দলের মনোনীত প্রার্থীকের বিজয়ী করতে একযোগে কাজ করবে।
নারায়ণগঞ্জ-২ আড়াইহাজার আসনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু আড়াইহাজার উপজেলা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জননেত্রী শেখ হাসিনার তিন তিনবারের আওয়ামীলীগের নির্বাচিত সরকার হওয়ায় ঢাকার অদুরে আড়াইহাজার উপজেলার প্রতিটি এলাকার স্মার্ট রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালর্ভাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির সহ ব্যাপক উন্নয়ণের কাজ করেছেন। দলীয় ভাবে আওয়ামীলীগের অঙ্গ-সংগঠনের শক্তিশালী নেতাকর্মী দিয়ে কমিটির গঠন করায় গোটা এলাকায়ই নৌকা প্রতিকের জয়গান ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। অন্যদিকে আইন শৃঙ্গলা বাহিনীর পাশাপাশী প্রতিটি এলাকায়ই শান্তি মিছিল করছে।
একাধীক দলীয় সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এর সাথে আলোচনা করলে তারা জানান, নজরুল ইসলাম বাবু আবারো নৌকার মনোনয়ন পাবে এবং তারা নিশ্চিত ভাবে আশাবাদী।
কেউ কেউ বলেছেন, সব কিছু ছাপিয়ে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে এবার আলোচনায় রয়েছেন সাবেক ব্রুনাইয়ের রাষ্ট্রদূত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ হোসেন। তাকে ঘিরে আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের মধ্যেও আগ্রহেরও যেন কমতি নেই।
তাই সিনিয়র ও বিনয়ী এই নেতার সঙ্গে অনেকেই গোপনে যোগাযোগ রাখছেন। কেউ কেউ আবার বলছেন, বরাবরের মতোই হবে; নাকি পরিবর্তন হবে। বিষয়টি তৃণমুল থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে নেতাকর্মীরা তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখছেন। অনেকেই আবার বলেছেন ড. হাবিব মোল্লা দলীয় মনোয়ন পেলে পূর্বাঞ্চলের নেতাকর্মীরা উৎসাসিত হবেন। তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
উপজেলা সদরের অনেক নেতা বলেন, শাহজালাল বেশ দক্ষতার সহিত দলীয় সভাপতির দায়িত্ব পালনসহ দুইবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। তাকে দলীয় মনোনয়ন দিলে মন্দ হবে না। এদিকে ইকবাল পারভেজের ব্যাপারেও অনেক নেতাকর্মী আশাবাদি। কেউ কেউ আবার নজরুল ইসলাম বাবুকেও সমর্থন দিচ্ছেন। তাকে ঘিরেও কিছু নেতাকর্মীর উৎসাহের যেন কমতি নেই। সব কিছু মিলিয়ে উপজেলার সর্বত্রই এখন আলোচনা হচ্ছে কে পাবেন শেষ পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন।
তবে অনেকটা গোপনীয়তা বজায় রেখেই এসব আলোচনায় সরগম হয়ে উঠেছে। এনিয়ে নাম না প্রকাশের শর্তে মুখ খুললেন উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সিনিয়র নেতা। তিনি বলেন, আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একপ্রকার জিম্মি করেই নিজের অবস্থানকে শক্ত করে রেখেছেন। তবে এখানে দলের অবস্থান আগের যেকোন সময়ের তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেকটা পাকা বেলের মতোই। আপাত দৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের অবস্থান শক্ত মনে হলেই প্রকৃত অর্থে আওয়ামী লীগের ভিতরে দূর্বল।
তিনি বলেন, এখানে আওয়ামী লীগের ভোটারের চেয়ে নেতার সংখ্যা বেশী। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি অনেকের নিজের উন্নয়নও হয়েছে বেশ। আড়াইহাজারে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীসহ নৌকা সমর্থিত সাধারণ ভোটাররাও এবার নৌকার প্রার্থীতায় পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছেন। এর কারণ হিসাবে তিনি নানা দিক তুলে ধরেন। এর মধ্যে একটি হলো ক্ষমতার দাপটে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই এরই মধ্যে তার র্দুব্যবহার শিকার হয়েছেন। অনেকেই হাতে লাঞ্চিতও হয়েছেন। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ প্রতি অনেক বিরক্ত হয়ে আছেন।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে আগের নির্বাচনগুলোর পরিবেশ থাকবেনা। এর ফলে নির্বাচনে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হবে। দলীয় প্রার্থী ক্লিনইমেজের না হলে পরাজয় নিশ্চিত। অনেকটাই জিম্মি করে রাজনীতির মাঠ তার দখলে রেখেছেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে অধিকাংশ নেতাকর্মী তার এমন কর্মকান্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন। বিগত স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও পৌরসভা নির্বাচনে তিনি দলের একাধিক প্রার্থীকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। এতে এলাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল। এর প্রভাব আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে পড়বে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, সদ্য অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আড়াইহাজার থেকে এর কিছু আলামত আমরা লক্ষ্য করেছি। আমি হলফ করে বলতে পারি বিগত সময়ে বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফলে খোদ আওয়ামী লীগের অনেক ভোট নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলোকে ফেরাতে হলে দলীয় প্রার্থীতায় এবার পরিবর্তন ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। আড়াইহাজার পৌরসভা আওয়ামী লীগের একনেতা বলেন, আমাকেসহ অনেক নেতাকে এবার পৌরসভা নির্বাচনে মাঠে নামিয়ে ছিলেন। এতে একদিকে অর্থের ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে ব্যাক্তির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।
সাংগঠনিকভাবে তিনি যেভাবে আড়াইহাজারকে সাজিয়েছেন। তাতে অনেক সিনিয়র নেতাকে তিনি অবহেলা করেছেন। শিশু-কিশোরকে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করিয়েছেন। এতে বেয়াদবের সংখ্যা বেড়েছে। আগামী ভোটের মাঠে এর প্রভাব পড়বে। তিনি আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে এবার দলীয় প্রার্থীর তালিকায় মমতাজ হোসেনের নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে।
পাশাপাশি ড. হাবিব মোল্লাও মাঠে কাজ করছেন। তারা দ’ুজনেই ভোটের মাঠে ফিট। ভোটারদের কাছে টানতে তাদের সময় লাগবেনা। সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি এবার প্রার্থীতায় আমি নিজেও পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছি। আমার বিশ্বাস আমার মতো অনেকেই এবার দলীয় প্রার্থীতায় পরিবর্তন চাচ্ছেন।