সাপ্তাহিক আড়াইহাজার: প্রতি বছরের মতো এই বছরও মেলা আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল, তবে ‘তৌহিদী জনতার’ পরিচয়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির আপত্তির মুখে প্রশাসন এবার অনুমতি দেয়নি। নারায়ণগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামে সুফি সাধক হযরত শাহ্ সোলায়মান ওরফে সোলেমান লেংটার ১৯৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাৎসরিক উরশ ও মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আয়োজকরা জানান, প্রতি বছর দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা থেকে ভক্তরা এই উরশ ও মেলাতে অংশ নেন, কিন্তু এবারের আয়োজন নিয়ে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি তাদের বিরোধিতা করেছেন এবং প্রশাসনও অনুমতি দেয়নি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, “হেফাজতে ইসলাম ও স্থানীয় তৌহিদী জনতার পক্ষ থেকে মেলার বিরুদ্ধে আপত্তি জানানো হয়েছে। বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখছি৷ তবে, এখন পর্যন্ত মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি।”
উরশ আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী জানান, শাহ সোলায়মানের জন্মস্থান কুমিল্লা হলেও তার আবাসভূমি ছিল রাধানগর গ্রামে। গত একশ’ বছর ধরে এখানে উরশ ও মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। তবে, এবারে স্থানীয় ব্যক্তিরা মেলার বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছেন এবং হুমকি দেওয়া হয়েছে। “প্রশাসনও অনুমতি দেয়নি, আমরা আতঙ্কিত,” বলেন তিনি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ৩০ নভেম্বর ‘বক্তাবলী পরগনার যুবসমাজ ও তৌহিদী জনতার’ পক্ষ থেকে শতাধিক মুসল্লি ও মাদরাসা ছাত্রের উপস্থিতিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। সেখানে মেলা নিয়ে অভিযোগ তুলে বলা হয়, “লেংটার মেলায় মাদক সেবন ও অসামাজিক কার্যকলাপ হয়।”
একই অভিযোগে শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধনও অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামি ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির সেখানে বলেন, “স্পষ্ট ভাষায় বলে দিচ্ছি, লেংটার মেলার নামে অশ্লীলতা, বেহায়পনা ও অপসংস্কৃতি চলতে দিবো না। কোনো প্রকার সংঘাত যদি হয়, তাহলে সমস্ত তৌহিদী জনতা আমরা ঐক্যবদ্ধ। প্রশাসনের মাধ্যমে যদি এটি বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে সেখানে কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ হবে না। আর যদি প্রশাসন এটি বন্ধ না করলে তৌহিদী জনতা অবশ্যই এটি বন্ধ করে দিবে।”
শাহ সোলায়মানের উত্তরসূরি মো. আমজাদ হোসেন বলেন, “আমরা কোনো সংঘাত চাই না, তবে প্রশাসন থেকে অনুমতি না পাওয়ায় আমরা সীমিত পরিসরে আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
‘লেংটার মেলা’ উপলক্ষে সুনামগঞ্জ থেকে এসেছেন মোহাম্মদ হালিম পাগল। মরমি সাধক লালন সাঁইয়ের এ ভক্ত বেশ কয়েক বছর যাবৎ রাধানগরে আসেন। তবে এবারের আয়োজন নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির ‘আপত্তি ও হুমকি’তে মনক্ষুন্ন হয়েছেন বলে জানান তিনি।
“আশেক-ভক্তদের মিলনমেলা প্রতিবছর এখানে হয়। বাবার রুহানি আত্মার দাওয়াতে আমরা আসি। এবার আসার সাথে সাথে কিছু উগ্রবাদী লোক বিরোধীতা করছেন। এইটা ভালো না। আমরা তো কারও বিরোধীতা করি না। আমরা আমাদের মতো চর্চা করি। তারা তাদের মতো থাকুক, আমাদেরও ভালো থাকতে দিক”, বলেন তিনি।
এদিকে, স্থানীয় মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা বেলাল হোসাইন অভিযোগ করেন, “মেলায় অবাধ মেলামেশা, মাদক সেবন, অশ্লীল গান বাজনা হয়, যা এলাকার যুব সমাজকে বিপথে নিয়ে যেতে পারে। তাই আমরা প্রশাসনকে মেলার অনুমতি না দিতে অনুরোধ করেছি।”
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম জানান, “মেলার অনুমতি না হলেও, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে। রোববার থেকে মেলায় পুলিশের উপস্থিতি থাকবে।”
এদিকে প্রশাসনিক অনুমতি না পাওয়ায় নারায়ণগঞ্জে লেংটার মেলা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২২ নভেম্বর স্থানীয় ‘তৌহিদী জনতা’র বিক্ষোভ, হুমকির মুখে সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামের ‘মহতি সাধুসঙ্গ ও লালন মেলার’ আয়োজন বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে পরে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে স্থানীয় প্রশাসন।