করোনা ভাইরাস সংক্রমণের `এপিসেন্টার` নারায়ণগঞ্জ। রাজধানীর পর এই জেলায় করোনার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। সংক্রমন রোধে নারায়ণগঞ্জে কারফিউ জারির দাবি যেখানে উঠেছে সেখানে এই ঝুঁকির মধ্যেই খুলে দেওয়া হয়েছে গার্মেন্টস কারখানা। মালিকপক্ষের দাবি, সবধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই গার্মেন্টস কারখানা খোলা হয়েছে। তবে শ্রমিকনেতারা বলছেন, মালিকপক্ষের মুনাফা চিন্তার কারনে হুমকির মুখে সাধারণ শ্রমিক।
করোনার প্রকোপের মধ্যও গতকাল রোববার (২৬ এপ্রিল) নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকে অধিকাংশ গার্মেন্টস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারখানা মালিকরা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা মেনে এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলায় বসবাসরত বা কারখানার আশপাশে থাকা শ্রমিকদের দিয়েই সীমিত আকারে কারখানা কার্যক্রম শুরু করেছে।
এ অবস্থায় পোশাক কারখানাগুলো সীমিত আকারে খুলে দেওয়ার বিষয়ে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে নিটওয়্যার পণ্যের ক্রেতা দেশগুলো প্রায় চার বিলিয়ন অর্ডার ক্যান্সেল করে দেয়। কিন্তু এখনো বাংলাদেশের হাতে প্রায় ছয় বিলিয়ন অর্ডার বুকিং দেওয়া আছে। কিন্তু ক্রেতা দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী এই অর্ডার যদি সরবরাহ করা না যায় এবং যেসব দেশে গার্মেন্টস কারখানা খোলা রয়েছে (চীন ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া) ক্রেতা দেশগুলো যদি তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে, তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের শ্রমিকরা। এই অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে এবং শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করেই সরকারের নির্দেশনা মেনে এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সীমিত আকারে নারায়ণগঞ্জসহ দেশের সব জায়গায় গার্মেন্টস কারখানার নিটিং, ডাইং ও স্যাম্পল সেকশন খোলা হচ্ছে। তবে এখনই খোলা হচ্ছে না গার্মেন্টস কারখানার সুইং সেকশন। আর সুইং সেকশনে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করে। নিটিং, ডাইং ও স্যাম্পল সেকশনে স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক কাজ করে। তাই এই সেকশনগুলো খোলা হচ্ছে। তবে যেসব কারখানার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে, সে সব কারখানার সুইং সেকশন শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে খোলা যাবে।
বিকেএমইএর সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেই ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে এবং ক্রেতা দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী সীমিত আকারে নারায়ণগঞ্জসহ বিকেএমইএর অন্তর্ভুক্ত কারখানাগুলো খোলা হচ্ছে।
তবে শ্রমিক প্রতিনিধিদের মতে, স্বাস্থ্য বিধি মেনে কারখানা পরিচালনার মতো পরিবেশ নেই। শ্রমিক তো কেবল কারখানাতেই থাকতে না। তারা বাইরে বের হবেন। আর যেহেতু নারায়ণগঞ্জে করোনার প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি তাতে হুমকির মুখে রেখে মুনাফার লোভে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত মালিকপক্ষের।
গার্মেন্টস ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন, করোনার হটস্পট চিহ্নিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ। এরমাঝে কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত মানে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া। কারণ এই শ্রমিকরা শুধু গার্মেন্টস কারখানায় বসে থাকবে না। শ্রমিকদের কেউ যদি আক্রান্ত হন, তিনি হাট-বাজারে যাবেন, রাস্তায় ঘুরবেন। তাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।