সারাদেশে

আড়াইহাজারে ডাকাত সন্দেহে তিন জনকে পিটিয়ে হত্যায় মামলা

স্টাফ রির্পোটার: দশকের পর দশক ধরে দেশে লাগাতার নির্যাতন-নিপীড়ন, ধর্ষণ-দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, গণপিটুনিতে হত্যা, গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। এ ধরনের সব সহিংসতারই মারাত্মক প্রভাব পড়ে জনমানসে।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ডাকাত আখ্যা দিয়ে লেগুনা মালিক ও দুই চালককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ‘ডাকাতি ও হত্যা’ মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই মামলায় নিহত তিনজন সহ ২৫০ এর বেশি অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৪ জানুয়ারী) বিকেলে রূপগঞ্জ উপজেলার ফকির ফ্যাশন ফ্যাক্টরীর বাস ড্রাইভার মো. হানিফা বাদী হয়ে ডাকাতির মামলা দায়ের করেন। আর আড়াইহাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রহমান ঢালী হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এছাড়াও সকালে সোনারগাঁও উপজেলার এশিয়ান হাইওয়ে সড়কে নিহতের ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।

দেশে ডাকাত বা ছিনতাইকারী সন্দেহে হত্যার ঘটনা হারহামেশাই ঘটছে। ২০১১ সালের ১৭ জুলাই শবেবরাতের রাতে সাত বন্ধু ঘুরতে গিয়েছিলেন ঢাকার অদূরে সাভারের আমিনবাজারের বড়দেশী গ্রামে। স্থানীয় কিছু দুর্বৃত্ত সাত ছাত্রকে ডাকাত বলে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে। এতে ছয় ছাত্র মারা যান। একজন প্রাণে বাঁচেন। ১০ বছর আগের এ হত্যা মামলার রায় সম্প্রতি হয়েছে। রায়ে ১৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৫ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, নিহতরা কেউ ডাকাত ছিলেন না। অভিযুক্তরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের হত্যা করে।

আরও পড়ুন >   আড়াইহাজারে কিস্তি তুলে কেনা অটোরিকশা নিয়ে গেল চোর

দেশের সাম্প্রতিক সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতায় একের পর এক গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা এবং এমন সহিংসতার নেপথ্যে থাকা গণমনোবিকারকে তাই খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক পরিসংখ্যানের বরাতে বিবিসি বাংলা জানিয়েছিল, বাংলাদেশে ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত গণপিটুনিতে অন্তত ৮০০ জন মানুষ নিহত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বছর ১০০ মানুষ এমন দলবদ্ধ সহিংসতার শিকার হয়ে মারা গেছে। কখনো ছেলেধরা, কখনো ডাকাত বা চোর সন্দেহে ওই ব্যক্তিদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। কোথাও ধর্ম অবমাননার অভিযোগে, আবার কোথাও সম্পত্তির বিরোধে এমন দলবদ্ধ হত্যাকা-কে গণপিটুনি বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান বলেন, ‘গণপিটুনিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি করেছেন শ্রমিকদের বহনকারী বাস চালক ও অন্যটি পুলিশ। এর মধ্যে পুলিশের হত্যা মামলায় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। আর বাস চলকের ডাকাতি মামলায় নিহত তিনজনের নাম উল্লেখ ও ১৪ থেকে ১৫জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’

ডাকাতি মামলায় বাদী বাস চালক মো. হানিফা উল্লেখ করেন, ‘প্রতিদিনের মতো ১৩ জানুয়ারি সকাল ৫টায় ফকির ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের আনতে প্রতিষ্ঠানের বাসে আড়াইহাজার উপজেলার সিংহদী ও আপরদী এলাকা থেকে কয়েকজন শ্রমিকদের নিয়ে ইলমদী পাকা রাস্তার মোড়ে পৌঁছা মাত্র অজ্ঞাত পরিচয় ১৪ থেকে ১৫জন ডাকাত সদস্য ২টি লেগুনা গাড়িতে শ্রমিকবাহী বাসের সামনে এসে গতিরোধ করে। দুটি লেগুনা থেকে ৫ থেকে ৭জন ডাকাত সদস্য বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র হাতে নিয়ে আমাদের বাসে উঠে আমাকে সহ বাসে থাকা ৯জন শ্রমিককে প্রাণ নাশের ভয়ভীতি দেখায়। এসময় বাসের শ্রমিকদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে বাস থেকে নেমে যায়। এসময় ইলুমদী মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষমান শ্রমিকেরা বাসের দিকে আসতে থাকে। তখন আমি সহ বাসের শ্রমিকেরা ডাকাত বলে চিৎকার করলে ডাকাতরা পালানোর চেষ্টা করে। এসময় তিনজন ডাকাতকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে আমরা বাসে শ্রমিকদেও নিয়ে ফকির ফ্যাশন প্রতিষ্ঠানে চলে যাই। পরে জানতে পারি স্থানীয় জনতা আটক তিনজকে গনপিটুনি দিয়ে হত্যা করে।’

আরও পড়ুন >   আড়াইহাজারে অস্ত্র নিয়ে মাদক বিক্রেতা দুই গ্রুপের সশস্ত্র মহড়া

তিনি আরো উল্লেখ্য করেন, ‘৩ জন ডাকাত সহ অজ্ঞাত পরিচয় ১১ থেকে ১২জনের পড়নে প্যান্ট, গেঞ্জি, শার্ট ও জ্যাকেট ছিল। ডাকত সদস্যরা স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষা সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় কথাবার্তা বলছিল। ডাকাত সদস্যদের বয়স ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে থানা অভিযোগ দেওয়া হয়।’

উল্লেখ্য বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় উপজেলার ইলমদী বেনজীর বাগ এলাকায় ডাকাত সন্দেহে তিন যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের স্বজনরা জানান, তিনজনের কেউ ডাকাত না। তারা লেগুনা মালিক ও চালক। তাদের পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে দুটি লেগুনা উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও দেখুন

সম্পৃক্ত

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button