জেলা সংবাদসারাদেশে

আদালতে মারা যাওয়া আড়াইহাজারের জালালের দাফন সম্পন্ন

আড়াইহাজার প্রতিনিধিঃ নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রদী এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের মামলায় গ্রেপ্তার মোঃ জালাল উদ্দিন(৬৩) আদালত থেকে জামিন পাবার পর পুলিশের হাজতে মারা গেছেন বলে অভিযোগ তার স্বজনদের। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) দুপুর সোয়া তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত জালাল উদ্দিন আড়াইহাজার উপজেলার রামচন্দ্রদী পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত মনরউদ্দিনের ছেলে৷

নিহতের স্বজনরা জানান, বুধবার দিবাগত রাত আড়াই টার দিকে নিজ বাসা থেকে জালাল উদ্দিন কে গ্রেফতার করে আড়াইহাজার থানা পুলিশ। পরে দুপুরে তাকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আনা হয়৷ এ সময় আদালত থেকে জামিন পান তিনি। তবে জামিনের কাগজ হাতে না পাওয়ায় তাকে হাজত থেকে বের করা যায়নি৷ হাজতেই দুপুর সোয়া তিনটার দিকে অজ্ঞান হয়ে পড়লে আদালত পুলিশের একটি গাড়িতে তাকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আনা হয়৷ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷

ওই সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. অমিত বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে৷ রাত নয়টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় নিহত জালাল উদ্দিনের ভাই আব্দুল হামিদের নাতি আব্দুল্লাহর সাথে৷ জালালের মরদেহ তখনও হাসপাতালে ছিল৷ বাইরে সদর মডেল থানা পুলিশকে দেখা যায়৷

আব্দুল্লাহ বলেন, রামচন্দ্রদী পূর্বপাড়া গ্রামে দেড় শতাংশ জমির উপর একতলা বাড়িতে বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকতেন নিহত জালাল উদ্দিন৷ এই জমি নিয়ে প্রতিবেশী ব্যবসায়ী ওমর আলীর সাথে বিরোধ রয়েছে৷ ২০১৮ সালে এ জমির ভুয়া দলিল করার অভিযোগে জালালসহ স্বজনদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন৷ গত বুধবার আদালতে ওই মামলার হাজিরার তারিখ ছিল৷

আরও পড়ুন >   আড়াইহাজারে পানিতে ডুবে ১১ বছর বয়সী শিশুর মৃত্যু

‘মামলার সাক্ষ্য সব আমাদের পক্ষে যাচ্ছিল৷ মামলায় হেরে যাবেন বুঝতে পেরে তিনদিন আগে ভোরে বাদী ওমর আলী ও তার ছেলে-নাতিরা আমার দাদা জালাল উদ্দিনকে হুমকি দিয়ে হাজিরা দিতে নিষেধ করেন৷ দাদা ভয়ে বুধবার হাজিরা দিতে যাননি৷ ওইদিনই নাকি তার বিরুদ্ধে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট হয়৷ রাত আড়াই টায় তারে গ্রেপ্তার করে৷’

আব্দুল্লাহ আরো বলেন, ‘দুপুরে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন৷ কিন্তু জামিনের কাগজ বের করতে না পারায় তারে কোর্টের হাজত থেকে বাইর করতে পারি নাই৷ কোর্ট থেকে কাগজ বের করার চেষ্টায় ছিলাম, হঠাৎ দুপুর তিনটার দিকে কোর্ট পুলিশের একজন বললো, জালাল উদ্দিনের স্বজনদের কে আছে, সে তো অসুস্থ হইয়া পড়ছে৷ তখন হাজতে গিয়া দেখি কেচিগেটের (কলাপসিবল) ভেতরে হাজতের মধ্যে দাদায় পইড়া আছে৷ পুলিশের কেউ তারে ধরতেছে না৷ আমরা তারে ধইরা দেখি হাত-পা ঠান্ডা হইয়া গেছে৷ পরে আমরাই তারে ধরাধরি কইরা পুলিশের একটা গাড়িতেই হাসপাতালে নিয়া আসি৷’

জালাল উদ্দিন আগে কৃষিকাজ করলেও বয়স বাড়ার পর কয়েকবছর যাবৎ কিছুই করতেন না৷ তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে৷ দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন৷ বড় ছেলে মো. মিলন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং ছোট ছেলে মো. নয়ন দশম শ্রেণির ছাত্র৷

‘দাদা আগে কখনও তিনি থানা-হাজত করেন নাই৷ বাদীপক্ষের হুমকির পর থেকেই তিনি ভয় পেয়ে যান৷ গ্রেপ্তার হইয়া জেল-হাজতের ভয়ে আতঙ্কে ছিলেন৷ দাদার লগে সকালে থানায় যখন কথা হয় তখন তিনি বলছিলেন, “তোরা ওগোরে জমি লেইখা দিয়া আমারে জামিন করা৷ আমি ওগো নামে জমি লেইখা দিমু৷ আমি এই বয়সে জেলে যাইতে চাই না৷” তারে জামিন করাতে পাইরা খুশি হইছিলাম কিন্তু বের করানোর আগেই তিনি মারা গেলেন৷ তার বাড়ি যাওয়া হইলো না৷’ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন আব্দুল্লাহ৷

আরও পড়ুন >   আড়াইহাজারে নাড়ী শ্রমিকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে আদালত পুলিশের পরিদর্শক মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, বুধবার জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগে একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়৷ আড়াইহাজার থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করেন৷ আসামিপক্ষ জামিন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন৷

তবে জামিন পেয়ে হাজত থেকে বের হবার পর জালাল উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে দাবি করেন আদালত পুলিশের এ পরিদর্শক৷

তিনি বলেন, ‘থানা পুলিশ আসামি সোপর্দের সময় কোনে অসুস্থতার কথা জানাননি৷ আসামি নিজেও কিছু বলেননি৷ আর জামিনে ওই আসামি হাজত থেকে বের হবার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ তখন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা৷ সেখানে তিনি মারা গেছেন বলে জেনেছি৷’

রাতে হাসপাতালে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে দেখা যায়৷ এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে একজনের মৃত্যুর খবর দিলে পুলিশ সেখানে যায়৷ হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক৷ আগে কী হয়েছে তা কোর্ট পুলিশ বিস্তারিত বলতে পারবে৷ তবে থানা পুলিশ সুরতহালে তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পায়নি৷’

এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ওসি৷

এদিকে মামলা ও বিরোধের বিষয়ে কথা বলতে বাদী ওমর আলীর ছেলে মনির হোসেনের মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি কলটি রিসিভ করেননি৷

আরও দেখুন

সম্পৃক্ত

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker