অপরাধজেলা সংবাদসারাদেশে

আড়াইহাজারে বিভিন্ন সাইজিংয়ের ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

আড়াইহাজার  প্রতিনিধিঃ বর্তমানে শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার গোপালদী পৌরসভা সহ বিভিন্ন এলাকায় বায়ু দূষণ মারাত্মক রূপ নিয়েছে। তাছাড়া বর্তমান নগরায়নের ফলে ফসলি জমি ও গাছপালা কেটে উজাড় করার কারণে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে। এতে করে বাতাসে দূষিত পদার্থের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।  মিল গুলোর কালো ধুয়া ও কালো ছাইয়ের কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ, পরিবেশ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

সম্প্রতি সময়ে আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার চারপাশে বৈধ ও অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য সাইজিং কারখানা। গোপালদী পৌরসভার উত্তর কলাগাছিয়া হাজী মুসা সাইজিং মালিক হাজী মুসা মিয়া, রামচন্দ্রদী এলাকার বেবি ট্যার্চ সাইজিং মালিক হাজী মাইনুদ্দিন ভূইয়া, টোসকাদী এলাকার সানজিদা সাইজিং মালিক ইসা মিয়া, দাইরাদী এলাকার ইমন সাইজিং মালিক হাজী কামাল, রামচন্দ্রদী এলাকার মনির সাইজিং মালিক এমএ হালিম শিকদার, জালাকান্দী এলাকার খোকা সাইজিং মালিক দেলোয়ার হোসেন খোকা, রামচন্দ্রদী এলাকার লেখক চৌধুরীর সাইজিং কারখানায় জ্বালানি হিসেবে গ্যাসের পরিবর্তে গার্মেন্টসের বর্জ্য পরিত্যক্ত  জুট ব্যবহূত হচ্ছে। এরই ফলে প্রচুর পরিমাণে কালো দুয়ার নির্গত হচ্ছে।

উপরোক্ত সাইজিং মিল গুলো থেকে অনবরত কালো দুয়া ও কালো ছাই নির্গমন হওয়ার কারণে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এবং আশেপাশের ফসলি জমি বাড়ি ঘর কালো দুয়া এবং কালো ছাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মিল গুলোতে নিয়ম নীতি না মেনে জুটের মাধ্যমে বয়লারে আগুন সৃষ্টি করে সুতা সাইজিং করেছে অনবরত।

আরও পড়ুন >   আড়াইহাজারে ছিন্নমূল শিশুদের মাদকাসক্তির দায় কার

মিলগুলোর এক কিলোমিটারের মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ বিদ্যমান আছে‌। কারখানার কালো ধুয়া ও কালো ছাইয়ের কারণে স্কুল মাদ্রাসার ছাত্ররা স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে আছে। কলকারখানা গুলোর কালো দুয়ার কারণে বিকাল হলেই চারিদিকে সন্ধ্যার আধার নেমে আসে। মানুষজন ঠিকমতো শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলতে পারেনা। মিল মালিকরা এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী, তাহাদের ভয়ে মিলগুলোর আশেপাশের গ্রামের সাধারণ লোকজন এ বিষয়ে কথা বলতে পারে না। প্রশাসন বা কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিতে চায় না।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আড়াইহাজার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বায়ু দূষণের দিক থেকে অন্য যে কোনো বড় বানিজ্যিক শিল্প নগরী এলাকার চেয়ে অনেক বেশি। এখানকার বাতাসে এত বেশি দূষিত পদার্থ মিশে আছে যে, যে কোনো সাধারণ মানুষই রাস্তায় হাঁটতে গেলে টের পায়। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, সাইজিং মিলের নির্গত কালো ধোঁয়া মূলত অদগ্ধ কার্বণ যা ছোট ছোট কণার আকারে নির্গত হয়। অপর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, সিসাযুক্ত বায়ুর কারণে দেশের অসংখ্য শিশুর জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। ফলে কারখানা থেকে নির্গত গ্যাস বিষাক্ত কার্বণ ডাই অক্সাইডে অগণিত মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এসব দূষিত ধোঁয়া মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে মিশে দেহের ভেতরে ঢুকে পড়ছে। ফলে স্থানীয় লোকজন একজিমা, হাঁপানি, আমাশয় এবং ম্যালেরিয়াসহ দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন। পুরো এলাকায় শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।  এই প্রক্রিয়ায় কালো বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। ক্ষেতের ফসল, গাছপালা মরে যাচ্ছে। যেসব এলাকায় এভাবে কালো ধোঁয়া বের হয় তার দুই তিন মাইলের মধ্যে বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। এলাকার শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কয়েক জন সাইজিং কলকারখানার মালিক সাথে আলাপ করলে তারা জানায়, আমরা নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র ও ব্যবসায়ীক ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছি। কালো ধোঁয়ায় পরিবেশের কোনো ক্ষতির কারণ নেই। ক্ষতির কারণ থাকলে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আমাদের ছাড়পত্র দিত না।

আরও পড়ুন >   আড়াইহাজারে ডাকাত সন্দেহে হত্যার প্রতিবাদে সোনারগাঁয়ে মানববন্ধন
আরও দেখুন

সম্পৃক্ত

Back to top button