আন্তর্জাতিক

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আবারো গুলাগুলি

উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে গুলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্যাম্পের হেড মাঝিসহ ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ক্যাম্পে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উখিয়ার ৪নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলি বর্ষণ হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী।

তিনি জানান, গুলিবিদ্ধদের মধ্যে ক্যাম্প-৪ এর হেড মাঝি মোহাম্মদ হোসেন রয়েছেন। অন্য দুইজনের পরিচয় জানা যায়নি। তাদের ক্যাম্পের এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘটনাস্থলে ৩০ জন পুলিশের একটি দল পাঠানো হয়েছে। এর আগে আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না।

আর্মড পুলিশ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প সূত্র জানায়, সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের। কী কারণে তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। তবে রোহিঙ্গারা বলছেন, মাদক বিক্রির টাকা ভাগাভাগি ও ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের মধ্য এ সংঘর্ষ হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লাম্বাশিয়া শিবিরের ডি ব্লকের ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) সংগঠনের কার্যালয়ে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হন মুহিবুল্লাহ (৪৮)। এছাড়াও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুলাগুলিতে অর্ধ শতাধিক রোহিঙ্গা নিহত হন।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন আট লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।

আরও পড়ুন >   চার দিনের সরকারি সফরে জেনেভায় পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র দাবি করছে, দেশের অভ্যন্তরীণ শীর্ষ জঙ্গি সংগঠনগুলোর অন্যতম টার্গেট এই রোহিঙ্গা ক্যাম্প। সদস্য রিক্রুট করার জন্য শীর্ষ জঙ্গি নেতারা নিয়মিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বৈঠক করছেন। জঙ্গি নেতাদের ইন্ধন দিচ্ছেন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে নিরাপত্তার বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প। বিশেষ করে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কাছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ থাকায় বিষয়টি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানা গেছে।

গোয়েন্দা তথ্য বলছে, পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী আদ্দু বাহিনী, গিয়াস বাহিনী ও সালমান শাহ বাহিনী। সালমান শাহ বাহিনীর সালমান শাহ কারাগারে থাকলেও সক্রিয় রয়েছে বাহিনীর কার্যক্রম। এ ছাড়া আছে জোকি বাহিনী, পুতিয়া বাহিনী, খালেক বাহিনী, জাকারিয়া গ্রুপ ও মুন্না গ্রুপ। জোকি বাহিনীর জোকি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হলে এই বাহিনীর হাল ধরে তার বড় ভাই দিল মোহাম্মাদ আর জামিল। শালবন পাহাড়কেন্দ্রিক নয়াপাড়া ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলে সবচেয়ে বেশি। সেখানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত করা হয়েছে বলেও তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। স্বার্থে টান পড়লেই যে কাউকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় নির্জন পাহাড়ে। অর্ধ শতাধিক লোককে সেখানে গুলি করে হত্যাও করা হয়েছে। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে প্রতিহত করতে গিয়ে গেল বছর প্রায়ই ঘটছে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাও। এখন পর্যন্ত ৩০টির মতো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে বলেও র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে ১৮ জন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি।

প্রসঙ্গত, এক কয়েকমাস আগে ১৮ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ওই ক্যাম্পের বি ব্লকের হেড মাঝি আজিম উদ্দিন কে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় নিহত আজিম উদ্দিনের স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ৫ জন।

আরও পড়ুন >   রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটো যুদ্ধে জড়ালে বিশ্বে বিপর্যয় নেমে আসবে: পুতিন -
আরও দেখুন

সম্পৃক্ত

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button
Close

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker